যদি এই পর্বটা পড়ে থাকেন তাহলে রহস্য ফাঁসঃ পর্ব-০২ এ ক্লিক করুন।
বিজ্ঞানীদের অনেক আবিষ্কার আছে পরস্পর বিরোধী একটির সাথে অন্যটির মিল নেই । মহাবিশ্ব সৃষ্টি রহস্য বিষয়ে যে সকল মতবাদ বিজ্ঞানীরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিতেছে সেইগুলি নিম্নে প্রকাশ করা হইল ।
চিত্রঃ মহাবিশ্ব
ভাগবতের আলোকে কোয়ান্টাম থিওরী (Quantum Theory) ভাগবতে মহাবিশ্বের যে পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা প্রদান করিয়াছে কোয়ান্টাম তত্ত্ব সেটার অংশ বিশেষ । ভাগবতের আলোকে কোয়ান্টাম তত্ত্ব এখানে আলোচনা করা হল । পরমাণুর সংজ্ঞা -
চরমঃ সদ্বিশেষাণামনেকোহসংযুতঃ সদা । পরমাণুঃ স বিজ্ঞেয়ো নৃণামৈক্যভ্রমো যতঃ ।। (ভাগবত ৩/১১/১)
অনুবাদ:- জড় জগতের যে ক্ষুদ্রতম অংশ অবিভাজ্য এবং দেহরূপে যাহার গঠন হয় না, তাহাকে বলা হয় পরমাণু । তাহা সর্বদা তাহার অদৃশ্য অস্তিত্ব নিয়ে বিদ্যমান থাকে, এমনকি প্রলয়ের পরেও । জড় দেহ এই প্রকার পরমাণুর
সমণ্বয়, কিন্তু সাধারন মানুষের সেই সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে । এই শ্লোকে পরমাণুর সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে । এ বিষয়ে আমরা পরবর্তী পোষ্টে আলোচনা করব ।মহাবিশ্ব পরমাণু দ্বারা গঠিত -
সত এব পদার্থস্য স্বরূপাবস্থিতস্য যৎ । কৈবল্যং পরমমহানবিশেষো নিরন্তর ।।(ভাগবত ৩/১১/২)
অনুবাদ:- পরমাণু হইতেছে ব্যক্ত জগতের চরম অবস্থা । যখন তাহারা বিভিন্ন প্রকারের শরীর নির্মাণ না করিয়া তাহাদের স্বরূপে স্থিত থাকে, তখন তাহাদের বলা হয় পরম মহৎ ।ভৌতিক রূপে নিশ্চয়ই অনেক প্রকারের শরীর রহিয়াছে, কিন্তু পরমাণুর দ্বারা সমগ্র জগৎ সৃষ্টি হয় । এই শ্লোকে বর্ণনা করা হইয়াছে, পরমাণু দ্বারা জগত গঠিত যাহা কোয়ান্টাম তত্ত্বে বলা হইয়াছে । ভগবান পরমাণু থেকে বিশাল ব্রহ্মান্ড সব জায়গায় বিরাজিত -
পরমাণুপরমমহতো-সত্বমাদ্যন্তান্তরবর্তী ত্রয়বিধুরঃ ।আদাবন্তেহপি চ সত্ত্বানাং যদ্ ধ্রুবং তদেবান্তরালেহপি।।(ভাগবত ৬/১৬/৩৬)
অনুবাদ - এই জগতে পরমাণু থেকে শুরু করিয়া বিশাল ব্রহ্মান্ড এবং মহত্তত্ত্ব পর্যন্ত সব কিছুরই আদি, মধ্য এবং অন্তে আপনি বর্তমান রহিয়াছেন । অথচ আপনি আদি, মধ্য এবং অন্ত রহিত সনাতন । এই তিনটি অবস্থাতেই আপনার অবস্থা উপলব্ধি করা যায় বলিয়া আপনি নিত্য । যখন জগতের অস্তিত্ব থাকে না, তখন আপনি আদি শক্তিরূপে বিদ্যমান থাকেন । এই শ্লোকে বর্ণনা করা হইয়াছে প্রলয়ের সময় পরমাণু ধ্বংস হইয়া শক্তিতে পরিণত হয়, আবার যখন সৃষ্টি শুরু হয় তখন শক্তি থেকে পরমাণু সৃষ্টি হয় । পরবর্তী পোষ্টে আমি আলোচনা করব সৃষ্টির শুরুতে গর্ভোদক নামক শক্তি থেকে সবকিছু সৃষ্টি হয় ।কোয়ান্টাম তত্ত্বে বর্ণনা করা হইয়াছে শক্তি হইতে পরমাণু সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু শক্তি আসল কোথা থেকে ? এই প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই মহাবিশ্বে সর্বমোট শক্তির পরিমাণ ০ (শূন্য) , এই প্রশ্নের সাথে এই উত্তরের কি সামঞ্জস্য তা আমি উপলব্ধি করতে পারছি না । আমাদের প্রশ্ন শক্তি আসল কোথা থেকে ? তার উত্তরে বলল, মহাবিশ্বের সর্বমোট শক্তির পরিমাণ শূন্য । কিভাবে এই সমস্যার সমাধান হল তা আমি উপলব্ধি করতে পারছি না । শক্তি কোথা হইতে আসিল-
শাস্ত্রে তা এভাবে প্রদান করিয়াছে-
একোহপ্যসৌ রচয়িতুং জগদন্ডকোটিং যচ্ছক্তিরস্তি জগদন্ডচয়া যদন্তঃ অন্ডান্তরস্থপরমাণুচয়ান্তরস্থং গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি ।। (ব্রহ্ম সংহিতায় ৫/৩৫)
অনুবাদ – আমি পরমেশ্বর ভগবান গোবিন্দের ভজনা করি, যিনি তাঁহার এক অংশের দ্বারা প্রতিটি ব্রহ্মান্ড এবং প্রতিটি পরমাণুতে প্রবিষ্ট হইয়াছেন, এইভাবে তিনি সমগ্র সৃষ্টিতে তাঁহার অনন্ত শক্তির প্রকাশ করিয়াছেন । এই শ্লোকে বর্ণনা করা হইয়াছে ভগবানের শক্তি পরমাণুতে প্রবেশ করিবার ফলে সৃষ্টি কার্যক্রম শুরু হয় অর্থাৎ পরমাণু ভগবানের শক্তি থেকে সৃষ্টি হয় । শক্তি আসিল কোথা থেকে তার উত্তর শাস্ত্রে বলা হয়েছে, শক্তি ভগবান থেকে এসেছে । পরে আমি ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি পর্বে আলোচনা করব এই মহাবিশ্ব প্রধান নামক একটি চিন্ময় বা বিপরীত পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয়েছে । সুতরাং বলা যায় পরমাণু চিন্ময় বা বিপরীত পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয়েছে যা বিজ্ঞানীদের ধারণা । সুতরাং বলা যায় বৈজ্ঞানিকেরা যে অসম্পূর্ণ কণাবাদী তত্ত্ব (Quantum Theory) আবিষ্কার করেছেন ভাগবত সেটাকে আরো পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করিয়াছে ।
বিজ্ঞানীদের অনেক আবিষ্কার আছে পরস্পর বিরোধী একটির সাথে অন্যটির মিল নেই । মহাবিশ্ব সৃষ্টি রহস্য বিষয়ে যে সকল মতবাদ বিজ্ঞানীরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিতেছে সেইগুলি নিম্নে প্রকাশ করা হইল ।
১) আইনষ্টাইনের ব্যাপক আপেক্ষিক তত্ত্ব (Einstein’s Law of Relativity)
২) বিগব্যাঙ্গ থিওরী (Big Bang Theory)
৩) বিগ ক্রাঞ্চ (Big Crunch Theory)
৪) বুদবুদ তত্ত্ব (Bubbles Theory)
৫) কণাবাদীতত্ত্ব (Quantum Theory)
৬) মানবতত্ত্ব নীতি (Anthropic Principle)
ক) দুর্বল মানবতত্ত্ব নীতি (Weak Anthropic Principle)
খ) সবল মানবতত্ত্ব নীতি (Strong Anthropic Principle)
এই নীতিগুলি সম্বন্ধে ভাগবতে বিস্তারিত আলোচনা করা হইয়াছে ।
দেখা গিয়াছে বেশিরভাগ নীতির মধ্যে সামঞ্জস্য নাই । আজ বিজ্ঞানী সমাজের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ, মহাবিশ্ব সম্বন্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ সম্পূর্ণ তত্ত্ব আবিষ্কার করা এবং আমরা যে বিশ্বে বসবাস করি তাহার একটি সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া । নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী স্টিফেন ডব্লূ হকিং তাঁহার A Brief History of Time (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) বইটিতে আবেদন করেছেন ভবিষ্যতে হয়ত আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান মানুষের আগমন ঘটবে যারা মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রদান করতে পারবে । আমার মতে ভাগবত (বৈদিক শাস্ত্র) মানুষের সেই আদিম ইচ্ছাকে পূরণ করিতে পারবে । ভাগবতে বিশ্বব্রহ্মান্ড বা মহাবিশ্বের গঠন সম্বন্ধে অত্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ও গঠনমূলক বর্ণনা করেছে যদি সেইসব বর্ণনা পূর্ণাঙ্গভাবে উল্লেখ করা হয় তা হলে একটি বৃহৎ গ্রন্থে রূপ নিবে সেইজন্য অত্যন্ত সংক্ষেপে কিছু উল্লেখ করা হল যারা বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি রহস্য পূর্ণাঙ্গভাবে জানতে চান তাদেরকে ভাগবত পড়িতে হবে । ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উপলব্ধি করতে হলে আমাদের কয়েকটি বিষয় সম্বন্ধে ধারণা নিতে হইবে । জড় জগত (Material World) আমরা যে জগতে বাস করি তাকে জড় জগত বলে । এই জগত জড় অর্থাৎ প্রাণহীন, ইহার সৃষ্টি ও ধ্বংস আছে । এই সৃষ্টি ও ধ্বংস কার্যক্রম চক্রাকারে চলিতে থাকে অর্থাৎ প্রথমে সৃষ্টি হয় তারপর কিছুদিন অবস্থান করে, কিছুদিন পর আবার ধ্বংস হয় । সুতরাং জড় জগতের সৃষ্টি, অবস্থান এবং ধ্বংস শাশ্বত নিয়মে নির্দিষ্ট সময় পর পর ঘটিতেছে । এইভাবে বিচার করিলে দেখা যায়, জড় জগতের সৃষ্টি ও ধ্বংস শাশ্বত ইহার কোন শুরু বা শেষ নাই । জড় জগত পুণঃপুণঃ সৃষ্টি ও ধ্বংস হয় ----
সর্বভূতানি কৌন্তেয় প্রকৃতং যান্তি মামিকাম্ । কল্পক্ষয়ে পুনস্তানি কল্পানি কল্পাদৌ বিসৃজাম্যহম্ । প্রকৃতিং স্বামবষ্টভ্য বিসৃজামি পুনঃ পুনঃ ভূতগ্রামমিমং কৃৎস্নমবশং প্রকৃতের্বশাৎ ।। (ভাগবত ২/১০/৩)
অনুবাদ:- কল্পান্তে সম্পূর্ণ সৃষ্টি, যথা জড় জগত এবং প্রকৃতিতে ক্লেশ প্রাপ্ত জীব আমার দিব্য দেহে লয় প্রাপ্ত হয় এবং নতুন কল্পের আরম্ভে আমার ইচ্ছার প্রভাবে তাহারা পুণরায় প্রকাশিত হয় । এ ভাবে প্রকৃতি আমার নিয়ন্ত্রনে পরিচালিত হয় । আমার ইচ্ছার প্রভাবে তাহা পুণঃপুণঃ প্রকট হয় এবং লয় হয় ।
স এষ আদ্যঃ পুরুষঃ কল্পে কল্পে সৃজত্যজঃ । আত্মাত্মন্যাত্মনাত্মানং স সংযচ্ছতি পাতি চ ।। (ভাগবত ২/৬/৩৯)
অনুবাদ:- সেই আদিপুরুষ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও প্রথম অবতার মহাবিষ্ণু রূপে নিজেকে বিস্তার করিয়া এই ব্যক্ত জগতের সৃষ্টি করেন । তাঁহার মধ্যেই অবশ্য সৃষ্টি প্রকাশিত হয় এবং জড় পদার্থ ও জড় অভিব্যক্তি সবই তিনি স্বয়ং কিছুকালের জন্য তিনি তাহাদের পালন করেন এবং তারপর তিনি পুণরায় তাহাদের আত্মসাৎ করিয়া নেন । উপরের শ্লোক দুইটি থেকে বুঝা যায় জড়জগত পুণঃপুণঃ সৃষ্টি এবং ধ্বংস হচ্ছে । আমরা জড় জগতের একটি ব্রহ্মান্ডের মধ্যে অবস্থিত পৃথিবী নামক গ্রহে বসবাস করিতেছি । এরকম অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ড নিয়া বিশ্ব ব্রহ্মান্ড গঠিত । ইহাকে জড়জগত বলে । ব্রহ্মান্ডের সংখ্যা -----
ক্ষিত্যাদিভিরেষকিলাবৃতঃ সপ্তভির্দশগুণোত তরৈরন্ডকোশঃ । যত্র পতত্যণুকল্পঃ সহস্রকোটিকোটিভি স্তদনন্তঃ ।। (ভাগবত ৬/১৬/৩৭)
অনুবাদ:- প্রতিটি ব্রহ্মান্ড মাটি, জল, আগুন, বায়ু, আকাশ, মহতত্ত্ব এবং অহংকার এই সাতটি আবরণের দ্বারা আচ্ছাদিত এবং প্রতিটি আবরণ পূর্ববর্তী থেকে দশগুন অধিক । এই ব্রহ্মান্ডটি ছাড়া আরও কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড রহিয়াছে এবং সেইগুলি আপনার মধ্যে পরমাণুর মতো পরিভ্রমণ করিতেছে । তাই আপনি অনন্ত নামে প্রসিদ্ধ । এই শ্লোকে বর্ণনা করা হইয়াছে ব্রহ্মান্ডের সংখ্যা কোটি কোটি । জড় জগত সম্বন্ধে আধুনিক বিজ্ঞানের ধারণা সঠিক । কারণ বিজ্ঞানে বলা হয়েছে কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র লইয়া এই মহাবিশ্ব বা বিশ্বব্রহ্মান্ড গঠিত ।
লেখাটির উৎস এই সাইট হতে
1 মন্তব্যসমূহ
পড়ে ভালো লাগছে
উত্তরমুছুনআপনার মন্তব্য প্রকাশ করার সময় ভদ্রতা বজায় রাখবেন। আপনি আপনার পরিচয় দিয়ে কিংবা না দিয়ে কমেন্ট/মন্তব্য করতে পারবেন।
আর হে, কমেন্ট করতে হলে অবশ্যই VPN ব্যবহার করতে হবে কারণ website টির সংস্করণ চলমান রয়েছে।
ধন্যবাদ