চতুর্কুমার

হিন্দুদের পৌরাণিক একাধিক গ্রন্থ অনুযায়ী কুমারগণ হলেন চারজন ঋষি, যারা শিশুর ছদ্মবেশের সারাবিশ্বে ভ্রমণ করে বেড়ান৷ তাদের নাম হলো যথাক্রমে সনক, সনন্দন, সনাতন এবং সনৎকুমার৷ তাদেরকে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার সর্বপ্রথম চার মানসপুত্র বলে অভিহিত করা হয়৷ ব্রহ্মার মন থেকে চার শিশুপুত্রের জন্মের পর তারা তাদের পিতার মতের বিরুদ্ধাচার করেন ও প্রতিজ্ঞা করেন যে তারা আজীবন অবিবাহিত কুমার হয়ে থাকবেন৷ তারা সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁরা কোনো বাসনা ছাড়াই এই প্রকৃতিবাদী ও আধ্যাত্মবাদী মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়াবেন এবং জীবজগৎকে জীবনের শিক্ষা দেবেন৷ তারা সকলেই ছোটোবেলা থেকে বেদ অধ্যয়ণ শুরু করেন এবং একসাথে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন৷

চিত্রঃ চতুর্কুমার


ভাগবত পুরাণ এই চতুর্কুমারকে বারোজন মহাজন বা মহাভক্তবৃৃন্দের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেন৷ তারা জন্মের পর থেকেই আত্মমোক্ষ লাভ করলেও বিষ্ণুর চরণে তাদের সেবা নিবেদন করতে ইচ্ছুক ছিলেন৷ হিন্দু আধ্যাত্মিকতার বৈষ্ণবধারার একাধিক গ্রন্থে চতুর্কুমারের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ বৈষ্ণবদের মতে, বিষ্ণুর ও তার অবতার শ্রীকৃষ্ণের আরাধনাপদ্ধতি ভক্তবৃৃন্দের মধ্যে প্রচারে চতুর্কুমার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য৷ 

চিত্রঃ চতুর্কুমারের পরিচয় 

নামসমূহঃ
ব্রহ্মার এই চারজন মানসপুত্র একত্রে একাধিক নামে পরিচিত যেমন: "কুমারগণ" "চতুর্সন" বা "চতুঃ সন" (যেই চারজনের নাম সন দিয়ে শুরু) এবং "সনকাদি" (সনক এবং অন্যান্য)৷ তাদের সর্বাধিক প্রচলিত নামগুলি হলো, সনক (অর্থ আদি), সনাতন (অর্থ চিরন্তন), সনন্দন (অর্থ উৎফুল্লতা) এবং সনৎকুমার (অর্থ চিরকুমার). কিছু কিছু ক্ষেত্রে সনাতনের বদলে সনৎসুজাত নামটি পাওয়া যায়৷ মাঝে মধ্যে এই চারজন ব্যতীত ঋভু নামে পঞ্চম কুমারের নামও পাওয়া যায়৷ আবার অনেক সময়ে চতুর্কুমারের বদল ছয়জন কুমারের নামও পাওয়া যায় তার মধ্যে অতিযোজিত নামদুটি হলো সন এবং ঋভু বা সনৎসুজাত৷ 

মহাভারতের কাহিনীতে আমরা এরকম সাতজন ব্রহ্মার কুমারের নাম পাই যেমন: অনিরুদ্ধ, সন, সনৎসুজাত, সনক, সনন্দন, সনৎকুমার, কপিল এবং সনাতন৷ এই সাত ঋষিকে জ্ঞানের উৎস (জ্ঞান আহরণ ব্যতীত) বলেও উল্লেখ করা হয়েছে৷ পরে এই সাতজন নিবৃত্তিকে বিবাহ করেছিলেন বলেও বর্ণিত রয়েছে৷

জন্ম ও উদ্দেশ্যঃ
চতুর্কুমাররা ছিলেন সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার প্রথম চারজন মানসপুত্র৷ ব্রহ্মা সমস্ত বিশ্ব সংসার সৃষ্টির দায়ভার গ্রহণ করলে তিনি প্রথমেই তার নিজের দেহাংশ ব্যবহার করে এমন কিছু সৃৃষ্টি করেন যা বা যারা তার সেই ক্ষত নিরাময় করতে পারবে৷ কুমারগণ ছিলেন প্রথম সৃষ্ট সেই জীব৷ তারা ব্রহ্মার মন থেকে সৃষ্ট হয়েছিলেন এবং তারা শিশুকুমার রূপে অবতীর্ণ হন৷ ব্রহ্মা তাদেরকে তাঁর পরবর্তী সৃৃষ্টির সুশ্রুষা করতে বললে তারা তাদের পিতার বাক্য না মেনে তারা বিশ্বজুড়ে সমস্ত জীবজগতের মধ্যে সত্ত্বগুণের প্রকাশ করতে এবং চিরজীবন দেবার্চনা করে কৌমার্য বজায় রাখতে অধিক উদ্যোগী হন৷ ফলে তারা চির কুমার হয়ে থাকতে হয়। তারা ছিল ভগবান শ্রী বিষ্ণুর সত্যনিষ্ঠ্য ভক্ত ফলে তারা ভগবান শ্রী বিষ্ণুর দর্শন পাবার আশায় বৈকুন্ডে পর্যন্ত যান। 

২য় পর্বে থাকবেঃ--> বৈকুন্ঠে গিয়ে চতুর্কুমার কেন এত রেগে গিয়েছিল এবং রেগে গিয়ে তাদের দেওয়া অভিশাপের ফল ভোগ করতে তিন মহাযুগ লাগিয়েছে কারা এবং কেন?